একজনের নামে থাকা জমি ১২ বছর ধরে অন্যজনের ভোগদখলে থাকলেই সেই জমি তার হয়ে যাবে, এমন আইনে পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। দখলদার যাতে জমির মালিক না হয়ে যায়, সেজন্য ‘ভূমির ব্যবহারস্বত্ব গ্রহণ আইন, ২০২০’ নামে নতুন আইন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রস্তাবিত আইনের খসড়া তৈরি করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। স্টেকহোল্ডারদের মতামতের পর তা চূড়ান্ত করা হবে। খসড়াটি ভেটিংয়ের জন্য শিগগিরই আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে যাচাই-বাছাই শেষে মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর আইনটি পাসের জন্য সংসদে উত্থাপন করা হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, সরকারি জমি অবৈধ দখল দণ্ডনীয় ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করে শিগগিরই আইন সংশোধন করা হচ্ছে। একজনের জমি আরেকজন জোরজবরদস্তি করে দখল করে রাখবে, তা হতে দেয়া যায় না। জমি দখল, দুর্নীতি ও জমি সংক্রান্ত মামলা কমাতে এ আইন কার্যকর ভূমিকা রাখবে।’ জমি দখলের সঙ্গে জড়িতরা যত ক্ষমতাবানই হোন না কেন, আইনটি হলে তারা ছাড় পাবেন না বলেও মন্তব্য করেন ভূমিমন্ত্রী।
জানা গেছে, আদালতে এখন যত মামলা রয়েছে তার ৭০ শতাংশ জমি সংক্রান্ত। যার বেশিরভাগই জমির দখল বিষয়ক মামলা। আর এসব মামলা চলতে থাকে বছরের পর বছর।
নিষ্পত্তি হওয়ার হারও উল্লেখযোগ্য নয়। দেশে জমির ভোগ-দখল সংক্রান্ত যে আইনটি রয়েছে তা ব্রিটিশ আমলের। ১৮৮৫ সালে প্রণয়ন করা হয়েছিল। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে দেশে অনেক আইনের পরিবর্তন হলেও এ আইন আগের মতোই রয়ে গেছে। এতে কারও জমি অন্যজন ১২ বছর ভোগ-দখল করলে সেই জমির মালিকানা পাওয়ার সুযোগ ছিল।
আইনটির প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে ভূমি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, যেমন ধরেন রহিম সাহেব ঢাকায় চাকরি করেন। তার জামালপুরে একটি বাড়ি আছে। সেই বাড়িতে তার পরিচিত কামালকে থাকার জন্য সুযোগ দিলেন। প্রায় ১৫ বছর ধরে কামাল ওই বাড়িতে বসবাস করছে। এলাকার লোকজনও জানে এটা কামালের বাড়ি। এখন রহিম সাহেব চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। গ্রামে এসে তার বাড়িতে থাকতে চান। তিনি আইনত কালামকে গায়ের জোরে বাড়ি হতে বের করে দিতে পারবেন না। স্বেচ্ছায় না যেতে চাইলে রহিম সাহেবকে দেওয়ানি আদালতে মামলা করে কামালকে বেদখল করতে হবে। যদি জোর করে বের করে দেন তবে কামাল দেওয়ানি আদালতে মামলা করে তার দখল বজায় রাখতে পারবে। এখানে দখলকারীর স্বত্ব বিবাদীর স্বত্বের চেয়ে ভালো বা বিবাদীর কোনো স্বত্ব আছে কি না তা দেখার কোনো দরকার হয় না। এখানে আদালত স্বত্বের বিষয় বিবেচনা করেন না। শুধু দখলের বিষয় বিবেচনা করেন।





No comments:
Post a Comment