নেশার টাকার জন্য রাজশাহীতে তিন বছরে ছয় স্বজন খুন - কাঁকন জার্নাল

সর্বশেষ সংবাদ

Home Top Ad


 

Post Top Ad


 

Tuesday, September 7, 2021

নেশার টাকার জন্য রাজশাহীতে তিন বছরে ছয় স্বজন খুন

অনলাইন ডেক্স:

শুধুমাত্র নেশার টাকার জন্য মা, বাবা, স্ত্রী-সন্তানকে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনা আশংকাজনক হারে বৃদিাধ পাচ্ছে। নেশাগ্রস্ত বেকাররাই এই হত্যাকা- সংঘটিত করছে। রাজশাহী নগরী, গোদাগাড়ী, পুঠিয়া ও বাগমারায় ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের ৫ সেপ্টম্বর পর্যন্ত এ ছয়টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব হত্যাকান্ড সংঘটিত হওয়ার পর আসামিদের গ্রেফতার করে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের এ তথ্য জানায় পুলিশ।

জাতীয়-স্থানীয় অনলাইন ও পত্রিকার সংবাদ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১৯ সালের ৯ জুলাই মাসে টাকা না পেয়ে মা সেলিনা বেগমকে হত্যা করে ছেলে আবদুস সালেক। গোদাগাড়ী পুলিশের ভাষ্যমতে হন্তারক পুত্র উচ্চশিক্ষিত ছিল। বাবা স্কুলশিক্ষক মো. শাহাবুদ্দিন। সালেক দীর্ঘদিন থেকে মাদকাসক্ত ছিল। মায়ের কাছে থেকে টাকা নেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিল। টাকা না পেয়ে এক পর্যায়ে হাতুড়ির আঘাতে মাকে হত্যা করে সে।

একই বছরের ৫ আগস্ট বাগমারায় টাকা না দেয়ায় মা চাম্পা বেগমকে (৭০) পিটিয়ে হত্যা করে নেশাগ্রস্ত ছেলে। সোনাডাঙ্গা ইউনিয়নে চম্পার ছেলে আবুল কাসেম (৫০) মাকে হত্যা করেছে বলে খবরে প্রকাশ।

পরের বছর ২০২০ সালের ৭ জানুয়ারি গোদাগাড়ীতে মাদকাসক্ত ছেলের লাঠির আঘাতে মা শ্রী শংঙ্কর রানীর (৬৫) মৃত্যু হয়। তার স্বামী আশা ঘোষ। তাদের ছেলে সুমন ঘোষ এ ঘটনা ঘটায়। স্থানীয়রা জানায়, সুমন দীর্ঘদিন থেকে নেশাগ্রস্ত ছিল। নেশা করার জন্য মায়ের কাছে টাকা চায় সুমন। কিন্তু টাকা দিতে অস্বীকার করায় লাঠি দিয়ে শংঙ্কর রানীকে আঘাত করে। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন শংঙ্কর রানী।

এছাড়া ২০২১ সালের ৫ জানুয়ারি পুঠিয়া উপজেলায় পাঁচ মাসের শিশুসহ স্ত্রীকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে মাদকাসক্ত স্বামী। নিহতরা হলেন- পলি খাতুন (২০) ও তার পাঁচ মাস বয়সী মেয়ে ফারিয়া খাতুন। হত্যার পরে রাজধানী ঢাকার দারুসসালাম এলাকা থেকে ফিরোজকে আটক করে পুলিশ। পুঠিয়ার ওসি রেজাউল ইসলাম জানিয়েছিলেন, ফিরোজ আরপিএল এলিগেন্স বাসে সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করতেন। একটি সড়ক দুর্ঘটনায় তার এক পা কাটা পড়ে। এরপর থেকে ফিরোজ হেরোইন সেবন শুরু করে। একপর্যায়ে সে অতিমাত্রায় হেরোইন আসক্ত হয়ে পড়ে। হেরোইন কেনার টাকার জন্য ফিরোজ মাঝেমধ্যেই স্ত্রী পলি খাতুনের ওপর নির্যাতন চালাতো। এনিয়ে ঝগড়া-বিবাদ ছিল রোজকার ঘটনা। এর সূত্র ধরেই রাগে-ক্ষোভে স্ত্রী ও কন্যাশিশুকে ঘুমের ঘোরে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে পুলিশের ধারণা।

সর্বশেষ রাজশাহীতে নেশার টাকা না দেওয়ায় মুমিনুল ইসলাম পিয়াস তার বাবা জুয়েলকে (৪৫) ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। রোববার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নগরীর অচিনতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত জুয়েল একই এলাকার মজিবুর রহমানের ছেলে। জানা গেছে, দুপুরে মাদক কেনার জন্য তার বাবার (জুয়েল) কাছে টাকা চায় পিয়াস। এ সময় টাকা দিতে আপত্তি জানালে ঘরে থাকা ছুরি দিয়ে জুয়েলকে আঘাত করে সে। এতে তিনি গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে পরিবারের অন্য স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসাপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

রাজপাড়া থানার (ওসি) মাজাহারুল ইসলাম বলেন, এই হত্যাকা-ের ঘটনায় অভিযুক্ত পিয়াসের বড় ভাই সুজন ইসলাম বাদি হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় পিয়াসকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

উন্নয়ন সংস্থা লাইট হাউসের ‘দাড়াও’ প্রজেক্টের প্রজেক্ট ম্যানেজার সুব্রতকুমার পাল জানান, সরকারি-বেরসকারিভাবে সচেতনা সৃষ্টির পাশাপাশি এই সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে পিতা-মাতাকে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। সন্তান ভালো না খারপের দিকে যাচ্ছে এটি সবার আগে মা-বাবা বুঝতে পারবে। সন্তানের খোঁজ খবর রাখতে হবে। সে কার সাথে মিসছে, কোথায় যাচ্ছে, সেটি দেখভাল করতে হবে। এটি সম্ভব না হলে এমন অঘটন কমবে না।

কাকন জার্নাল/তরিকুল ইসলাম

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad


 

Pages