চাঁপাইনবাবগঞ্জে নতুন বউ আনতে গিয়ে বজ্রপাতে ১৭ জন নিহত! - কাঁকন জার্নাল

সর্বশেষ সংবাদ

Home Top Ad


 

Post Top Ad


 

Thursday, August 5, 2021

চাঁপাইনবাবগঞ্জে নতুন বউ আনতে গিয়ে বজ্রপাতে ১৭ জন নিহত!

 অনলাইন ডেক্স:

নতুন বউ আনতে গিয়ে নদীর ঘাটে বজ্রপাতে ৫ জন নারী সহ অন্তত ১৭ জন নিহত, আহত হয়েছেন ১০ জনেরও বেশি। তবে নিহতের সংখ্যা আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গুরুতর আহতরা শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সহ বিভিন্ন জায়াগায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন।

বুধবার আনুমানিক সকাল সাড়ে ১১টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার দক্ষিন পাঁকা (ধুলাউড়ি) ফেরিঘাটে ঘটনাটি ঘটে। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সকালের দিকে প্রচুর বৃষ্টির মধ্যে একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকা প্রায় ৫০ জন লোক নিয়ে দক্ষিন পাঁকা (ধুলাউড়ি) ঘাটে ভিড়ে।

এতে ঐ এলাকার কনে (নতুন বউ) নিয়ে যাওয়ার দাওয়াত খেতে আসছিল বর পক্ষের লোকজন। এ সময় বৃষ্টির কারণে নৌকা থেকে নেমে পদ্মানদী তীরে অবস্থিত একটি টিনের ছাওনির নিচে (ঘাটের যাত্রী ছাউনি) আশ্রয় নেন। অনেকে দৌড়ে পার্শ্ববর্তী গ্রামে আশ্রয় নেন। এসময় বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই ৫ জন নারী ও ১২ জন পুরুষ নিহত হন। আহত হন অন্তত ১০ জন।

কনের প্রতিবেশী ও নিকট আত্মীয় মোঃ আশরাফুল ইসলাম (সাবেক ইউপি সদস্য) “চেতনা ৭১” কে জানান, গত ১ আগস্ট রবিবার দক্ষিণপাঁকা তের রশিয়া গ্রামের মোঃ হোসেন আলীর কনিষ্ঠ কন্যা মোসাঃ সুমী খাতুনের সাথে নারায়নপুর ইউনিয়নের জনতার হাট এলাকার মোঃ ধুলু মিয়ার ছেলে মোঃ মামুন অর রশিদ এর বিয়ে হয়। গত ২ তারিখ সোমবার আমরা কনে সুমীকে বর মামুন সহ শশুর বাড়ি(জনতার হাট) থেকে বাবার বাড়ি (দক্ষিণ পাঁকা তের রশিয়া) নিয়ে আসি। বর-কনে কে নিয়ে যাওয়ার জন্য বুধবার দিন ধার্য্য করে বরের বাবাকে দাওয়াত দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী বরের বাবা মোঃ ধুলু মিয়া তার পরিবারের সদস্য ও নিকট আত্মীয়দের সঙ্গে নিয়ে আজ সকালে রওনা হয়। ঘাটে নৌকা পৌছানোর আগেই তুমুল বৃষ্টি শুরু হলে তারা নৌকা থেকে ধুলাউড়ি ঘাটে নেমেই একটি টিনের চালার নিচে আশ্রয় নেয়। এসময় বজ্রপাত হলে বরের বাবা মোঃ ধুলু মিয়া, বরের ভগ্নিপতি, নানী সহ একই পরিবারের ৭ জন ঘটনাস্থলেই মারা যান। বজ্রপাতে মোট মৃত ১৬ জনের মধ্যে ১ জন পাঁকা ইউনিয়নের এবং বাকি ১৬ জনই জনতার হাট এলাকার বরের নিকট আত্মীয়। পাঁকা ইউনিয়নের মৃত 

ব্যক্তি হলেন তের রশিয়া গ্রামের সোহবুল আলীর ছেলে মোঃ রফিকুল ইসলাম (৫০)মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী চরপাঁকার মৃত ফারাস উদ্দিন এর ছেলে মোঃ মনিরুল ইসলাম।তিনি “চেতনা ৭১” কে জানান, আমি জমিতে কাজে গেছিলাম ঐ এলাকায়। প্রচুর বৃষ্টি শুরু হলে নদীর তীর সংলগ্ন এক আত্মীয়র বাড়িতে আশ্রয় নিই। ঘটনাস্থল থেকে ঐ বাড়ির দুরত্ব প্রায় আড়াইশো মিটার। আমি বাড়ির বাইরের ওঠানে ছিলাম। বৃষ্টি থেমে যাওয়ার আগমুহুর্তে হঠাৎ বজ্রপাতের প্রচন্ড শব্দে চমকে উঠি। ঘাটের দিকে এগিয়ে যায়। দেখি ২০/২৫ জন ছড়িয়া ছিটিয়ে নদীর ধারে পড়ে আছে। অনেকেই মারা গেছে। অনেকেই ছটফট করছে। আমি কয়েকজনের হাত-পা নাড়ি এবং মাথা কপালে হাত বুলাই। আমার চোখের সামনে কয়েকজনের দম যায় (শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন) এর মধ্যে গ্রামের লোকজন জড়ো হতে থাকে। বিভৎস ও দৃশ্য দেখে আমি সেখানে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। গ্রামের লোকজন আমাকে বাড়িতে নিয়ে আসে। জ্ঞান ফিরে বাড়ির লোকজনের কাছে জানলাম প্রায় সাড়ে ৩ ঘন্টা পরে আমার জ্ঞান ফিরেছে।এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ৪৩ চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাকিব আল রাব্বি, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মোঃ আরিফুল ইসলাম, ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দীন সহ অন্যান্যরা। এমপি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও সান্ত্বনা জানান।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মোঃ আরিফুল ইসলাম জানান, খবর পেয়েই আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। পাঁকা ইউনিয়নের বজ্রপাতে নিহত রফিকুল ইসলাম এর বড় ছেলের হাতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও এমপি মহোদয়, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সহ উপজেলা প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছে।

বজ্রপাতে নিহত বাকিরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বাসিন্দা। তাদের পরিবারের জন্য সদর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় বজ্রপাতে নিহত ব্যক্তির জন্য ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং আহতদের জন্য ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়ে থাকে। 

কাকন জার্নাল/তরিকুল ইসলাম

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad


 

Pages